টেকসই পরিষেবা অর্জন ছাড়া শহরের উন্নতি সম্ভব নয় : ড. কাজী সাইফুল ইসলাম 

 

ঢাকা নভেম্বর ০৩ ২০২১ :

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীন পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতিত্বে এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন  এসএনভি এর আরবান স্যানিটেশন প্রোগ্রাম সেক্টর লিডার এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার মার্ক পেরেজ ক্যাসাস, ঢাকা ওয়াসা এর নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম।

এ অধিবেশনে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীন পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড গোলাম মর্তুজা, জিএফএ-টিলার প্রকল্পের ডেপুটি টিম লিডার আনিসুর রহমান এবং গ্রামীণ দরিদ্র উন্নয়ন সংস্থা এর ডিরেক্টর, রিসার্চ এর জোবাইর হাসান। একই সাথে মনোনীত প্রবন্ধ Analyzing the Causes of Frequent Waterlogging and the Subsequent Socio-Economic Impacts in Developing Countries: A Case Study of Teligati, Khulna এর প্রবন্ধক মো সাব্বির হোসাইন এবং Measuring the Sustainability of Sanitation Service Facilities in the Major Urban Slums of Khulna City Using AHP Tool এর প্রবন্ধক মো সাব্বির হোসাইন তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এসএনভি এর আরবান স্যানিটেশন প্রোগ্রাম সেক্টর লিডার এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার মার্ক পেরেজ ক্যাসাস বলেন এসএনভি বাংলাদেশে পানি স্যানিটেশন অংশের জন্য কাজ করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন দেশে এখন আমরা পানীয় জলের স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধিতে বেশ সন্তোষজনক সূচক দেখতে পাচ্ছি। আমরা শহরের অংশীদারদের সক্ষমতা তৈরি করছি। একই সাথে সকলের জন্য আরও ভাল স্যানিটেশন তৈরির জন্য সুশাসন এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী, ইঞ্জিনিয়ার বদরুল আলম বিগত কয়েক বছরে ঢাকা ওয়াসার প্রচেষ্টা এবং কাজের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দিয়েছেন এবং বলেছেন সুষ্ঠভাবে শহরের সকলের  পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার, সিটি কর্পোরেশন, পরিকল্পনাবিদ এবং সকলের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে।

প্রবন্ধ কমো সাব্বির হোসাইন Analyzing the Causes of Frequent Waterlogging and the Subsequent Socio-Economic Impacts in Developing Countries: A Case Study of Teligati, Khulna” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন অপরিকল্পিত নির্মাণের সাথে দ্রুত নগরায়নের কারণে জলাবদ্ধতা খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে যার কারন হিসেবে তিনি কঠিন বর্জ্য নি:সরণ, পুকুর ও গর্ত ভরাট করা, প্রাকৃতিক জলাশয় দখল, বর্ষাকালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদি দেখিয়েছেন। তিনি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এবং পরিকল্পনাবিদ ও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।

মো সাব্বির হোসেইন তার Measuring the Sustainability of Sanitation Service Facilities in the Major Urban Slums of Khulna City Using AHP Tool শীর্ষক দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় খুলনা শহরের প্রধান শহুরে বস্তিগুলোতে স্যানিটেশন পরিষেবা সুবিধার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে বস্তিগুলোতে ব্যক্তিগত টয়লেটের অপর্যাপ্ততা এবং শেয়ারড টয়লেটগুলোতে পরিচ্ছন্নতার অভাব বর্ণনা করেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্তক অধ্যাপক ড. গোলাম মোর্তজা প্রবন্ধককে সাধুবাদ জানিয়ে কিছু গঠনমূলক দিক নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত সমস্যাগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে তারা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

জিএফএ-টিলার প্রকল্পের ডেপুটি টিম লিডার আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর পিছনে লুকানো কারণগুলি খুঁজে বের করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে এগুলো যেনো পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি আরও বলেন, শহুরে এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা খাল এবং নদীগুলোর মধ্যে কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, আমি ঢাকা শহরে ওয়াসা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পরিষেবা পরিস্থিতির প্রধান সাক্ষী। শহরে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে গ্রামীণ জল সরবরাহ এবং স্যানিটেশনের দিকগুলি মূল্যায়ন এবং অন্তর্ভূক্ত করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলোতে কৃষি এবং পর্যটনের মতো অন্যান্য দিকগুলিকে উন্নীত করার লক্ষ্যে অবকাঠামো এবং বস্তি দূরীকরণের জন্য তিনি কিছু বাস্তব সমাধান খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।

অধিবেশনের সভাপতি এবং সঞ্চালক ড. কাজী সাইফুল ইসলাম তার সমাপণী বক্তব্যের প্রথমেই বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এবং আলোচক-প্রবন্ধকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন টেকসই পরিষেবা এবং নাগরিক পরিকল্পনার এজেন্ডা অর্জন করা ছাড়া শহরের উন্নতি সম্ভব নয়। একইসাথে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জনমতের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচিত নীতি প্রণয়নের সময় শ্রেণী-বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলি সমাধান করা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় সাধারণ মানুষের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, জনগণের উন্নতির জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব নিরসন এবং বাংলাদেশে নগরায়নের হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে মাথায় রেখে সকলের জন্য স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার উপর গুরত্বারোপ করেছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর উদ্যোগে এবং জার্মান এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জিআইজেড) বাংলাদেশ এর  সহযোগিতায় Planning for Inclusiveness and Sustainability in Post Pandemic Era (মহামারী পরবর্তী কালে অন্তর্ভূক্তিতা ও স্থায়িত্বশীলতার জন্য পরিকল্পনা) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিগত ৩০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ থেকে সপ্তাহব্যাপী চলমান নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইকার্প) ২০২১ এর সপ্তম ভার্চুয়াল অধিবেশনঃ টেকসই পরিষেবা এবং নাগরিক পরিকল্পনা অদ্য ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জুম প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।

অধিবেশনটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সর্বশেষ