ক্ষুদ্র কৃষকদের কোভিড মোকাবেলায় সহায়তা অব্যাহত রাখছে ইফাদ

ক্ষুদ্র কৃষকদের কোভিড মোকাবেলায় সহায়তা অব্যাহত রাখছে ইফাদ

 

ঢাকা ৭ নভেম্বর ২০২১ :

ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবনে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবেলা করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এবং কৃষি মন্ত্রণালয় উপকূলীয় সাতটি জেলার পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বসতবাড়ী সংলগ্ন বাগান করার কৃষি উপকরণ এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণের সরঞ্জাম বিতরণ শুরু করেছে।

কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সম্ভাব্য খাদ্য সংকট প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ইফাদ তার রুরাল পুওর স্টিমুলাস ফেসিলিটি (আরপিএসএফ) থেকে দুই ধাপে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সতেরো কোটি টাকা) অনুদান প্রদান করেছে।

কোভিড-১৯ সংকটে গ্রামীণ জীবিকার স্থিতিস্থাপকতাকে সুরক্ষা করতে ইফাদের নানা বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে আরপিএসএফ। আরপিএসএফ- ২ মূলত এর প্রথম পর্যায়ের আওতায় প্রদত্ত সহায়তার পরবর্তী পর্যায়। বিতরণের জন্য প্রতিটি মাইক্রো-গার্ডেনিং কিটে টমেটো, পালং শাক, লাল শাক, গাজর, বেগুন, বরবটি এবং চারটি প্রস্তাবিত সারের একটি সেট সহ ছয় ধরণের উচ্চ মানের সবজির বীজ রয়েছে।

এই উদ্যোগের আওতায় পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী এবং ভোলা জেলার থেকে কৃষকেরা এই কৃষি উপকরণ সহায়তার পাশাপাশি ছোট বসতবাড়ির জমিতে পুষ্টিকর ফসল উৎপাদনের জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন। চট্টগ্রামের ১২টি উপজেলা এবং খুলনার চারটি উপজেলার আরও কিছু কৃষি পরিবারসমূহ ফসল কাটা, সংরক্ষণ এবং পরিবহন সহজ করার জন্য ফসল কাটার ক্লিপার এবং প্লাস্টিকের ক্রেট গ্রহণ করবে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ জোর দিয়ে নারী কৃষকদের মাঝে উৎপাদিত বিভিন্ন রকমের মশলা প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে এবং সেইসাথে নারী কৃষকেরা স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।

এই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করার সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম বলেন, “আমরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, এখন সরকার পুষ্টিকর খাদ্য – শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন “এই ধরনের উদ্যোগগুলি শুধু কৃষকদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদাই মেটাবে না, পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদেরকেও বসতবাড়ির জমি ব্যবহার করে পুষ্টিকর সবজি আবাদ করতে উৎসাহিত করবে, যা এই অঞ্চলে শাক-সবজি উৎপাদন এবং প্রাপ্যতাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।”

“বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সবজি ও ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা এবং মাটিতে লবণ অনুপ্রবেশ একেকটি প্রতিবন্ধকতা। উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তার জন্য ইফাদের কার্যক্রম কৃষকদের প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তি সবরাহের মাধ্যমে এই প্রতিবন্ধকতা হ্রাসের প্রচেষ্টা করে,” তিনি যোগ করেন।

শেরিনা তাবাস্সুম, বাংলাদেশে ইফাদের অফিসার ইনচার্জ বলেন, “প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় যেখানে কোভিড-১৯ সংকটের কারণে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং অপুষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থার একটি অংশ হতে পেরে ইফাদ আনন্দিত। বিশ্বব্যাপী মহামারী দ্বারা সৃষ্ট সংকটের সময় উৎপাদন,

বাজার অভিগম্যতা এবং কর্মসংস্থানকে সহায়তা করে দরিদ্র গ্রামীণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করাই ২০২০ এর এপ্রিলে শুরু হওয়া আরপিএসএফ- এর লক্ষ্য।”

তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগ কৃষকদের বাড়িতে চাষাবাদ করতে সহায়তা করে যাতে তারা মৌসুম শুরুর আগেই আগাম জাতের সবজি উৎপাদন করে বেশি লাভবান হতে পারে। উদ্যোগটিতে নারী কৃষকদের অন্তর্ভুক্তি তাদের অতিরিক্ত আয় বাড়াতে, খাদ্যে বৈচিত্র্য এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের পর্যাপ্ততা বৃদ্ধি করতে এবং পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।”

আরপিএসএফ অনুদানটি ইফাদ এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নকৃত স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পেটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হয়। এসএসিপি প্রকল্পটি বাংলাদেশের ১১টি উপকূলীয় জেলার ৩০টি উপজেলায় মোট ১১১.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হল ২৫০,০০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আয় এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা যাতে তারা বৈচিত্র্যপূর্ণ, উচ্চ-মূল্যের ফসল উৎপাদন এবং তাজা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে আরও সক্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।

সর্বশেষ