বাগেরহাটের ৯ উপজেলা পানিতে নিমজ্জিত, দুর্ভোগে ৫ লক্ষ মানুষ

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকুলে মুষলধারে বৃষ্টিতে বাগেরহাট ৯ উপজেলা বেশিরভাগ এলাকা ও প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব এলাকার ৫লক্ষমানুষ। এছাড়াও জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ৯ উপজেলা বাসী।

শনিবার (২৫ আগস্ট) রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শহরের পাশাপাশি জেলার নিম্নাঞ্চলও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় ভোগান্তিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা. মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, ফকিরহাট মোল্লাহাট. চিতলমারী কচুয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে অনেকের পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

বিকালের দিকে শহর ঘুরে দেখা যায়, বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী রোড, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, খারদার স্কুল রোড, জেলা হাসপাতাল মোড়, সরকারি স্কুল, জেলা ডাকঘরের সামনে, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এক ফুটের বেশি পানি রয়েছে পৌরসভা কম্পাউন্ডের মধ্যে। পৌরসভা ভবনের সামনের রাস্তায় অনেক পানি দেখা যায়। অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে। সড়কে পানি জমে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। পানিবন্দি পরিবারগুলো এখন দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে।

এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে পেটের টানে রাস্তায় বের হওয়া রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যাত্রী না থাকায় যেমন আয় নেই, তেমনি পানিতে নিমজ্জিত রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

হেমায়েত হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, ৫ জনের সংসার চলে আমার পায়ের ওপর। তাই তো সকালে বৃষ্টির মধ্যে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু লোকজন নেই। ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ১২০ টাকা হইছে। কি আর করা, একে তো বৃষ্টি তার ওপর রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে গেছে, মানুষ বের হয়ে কোথায় যাবে।

অটোচালাক জামাল ফকির বলেন, শহরের রাস্তাগুলো ভাঙা, এরইমধ্যে লাগাতার বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই শহরের অধিকাংশ রাস্তায় জমে থাকে হাঁটুপানি। যাত্রী পাওয়া যায় না। ইনকাম করতে কষ্ট হয়। এতে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

পুরাতন বাজারের এক নারী বাসিন্দা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। আমাদের এখানকার ৬টি পরিবারের একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশন না হওয়া পর্যন্ত আমরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাব না।

পথচারী এস এম রিফাতুল ইসলাম জনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু সমান ময়লা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হচ্ছে। আমরা দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান চাই।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে কথা বলার জন্য পৌরসভার মেয়রসহ দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

তবে মাসখানেক আগে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম রিজভি বলেছিলেন, শহরে পাঁচ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে। ড্রেনের কাজ শেষে পাঁচটি খাল খনন কাজ শুরু করা হবে। খালের কাজ শেষ হলে পৌরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।

এদিকে গত তিনদিন ধরে জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। তবে এতে বন্য প্রাণীদের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির।

সর্বশেষ