তিন বছরেও ব্রিকস ব্যাংকের সুবিধা পায়নি বাংলাদেশ

 

চলতি বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশের চারটি প্রকল্পে ঋণ অনুমোদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ব্রিকস ব্যাংক ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুবিধা পায়নি বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ব্রিকস নেতৃত্বাধীন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগ দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু  ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া আর কোনো দেশের জন্য এই বহুজাতিক  সংস্থা ঋণ অনুমোদন করেনি। জানা গেছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাংহাই-ভিত্তিক এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশকে তাদের ষষ্ঠ সদস্য হিসেবে স্বাগত জানায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) ঋণ অন্য ঋণদাতাদের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে বাংলাদেশ এই সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সদস্যপদ গ্রহণের পর অবকাঠামো নির্মাণ এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহজতর করার জন্য এনডিবির কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। সবশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। তখন ঢাকার পক্ষ থেকে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করার অনুরোধও জানানো হয়েছিল।  অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদনে ধীরগতির কৌশল নিয়েছে এনডিবি। তবে গত শুক্রবার এক ইমেইল বার্তায় এনডিবি জানায়, এনডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় এবং অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সহায়তা করবে। জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য ও এসডিজি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এনডিবি।

এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনডিবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং চিফ অপারেটিং অফিসার ভøাদিমির কাজবেকভের এক বৈঠকে ঢাকাকে জানিয়েছিল, এনডিবি বাংলাদেশে বড় প্রকল্পের জন্য বছরে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চায়। একই সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে ২০২৬ সাল  সময়কালে আরও ৩৫০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। তার  আগে বিভিন্ন প্রকল্পের  জন্য ৮৮৭  কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে গত বছর বাংলাদেশের চারটি প্রকল্পের ধারণাপত্র অনুমোদন করেছে এনডিবি। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য মতে, ২০২৩ সালের আগস্টে ঢাকার ওয়াসার প্রকল্পের জন্য ৩২ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জন্য ৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এনডিবি। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক পিএলসির জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ ঋণ অনুমোদন করেছে।  এই তহবিল বেসরকারি উদ্যোগে পরিষ্কার জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতা, পরিবহন এবং ডিজিটাল টেকসই অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেওয়া হবে। চলতি বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে এই ঋণ অনুমোদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনডিবি।  অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,  এনডিবির পরিচালনা পর্ষদের কাছে আমরা কম করে হলেও দুটি ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছি। ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যও প্রস্তুত আমরা।

ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন,  প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য এনডিবির ঋণ অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় আছি আমরা।নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ গত বছর এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন,  প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্য দেশগুলোর ১০০টি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৩ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণে সম্মতি দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, প্রস্তাবিত এনডিবি ঋণগুলো ব্যয়বহুল হওয়ায় সরকার ধীরে এগোচ্ছে।  এনডিবির ঋণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সংস্থাটির ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৯ বছর।

এটি ছয় মাসের লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) ওপর ১ দশমিক ০৩ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত স্প্রেড চার্জ আরোপ করে। এ ছাড়া অনুমোদিত ঋণের জন্য ০.২৫ শতাংশ ফ্রন্ট-এন্ড ফি এবং অনুমোদনের পর ঋণের অব্যবহৃত অংশের জন্য ০.২৫ শতাংশ চার্জ আরোপ করে। লাইবর কাভার করা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও ব্যয়বহুল ঋণ নেয় বাংলাদেশ সরকার। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) নামক একটি বহুজাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়।

 

সর্বশেষ