চলতি বছর ১০ লাখ টন চাল আমদানি করবে সরকার
গত কয়েক বছরে নানা কারণেই বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থির আয়ের মানুষজন। দাম বেশি হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিমতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় বাজারে চালের দাম বেশি।
যদিও এখন কিছুটা কমেছে। তবে সব কিছু বিবেচনায় রেখে মজুদ বাড়াতে চলতি বছর অন্তত ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমদানি করার চুক্তি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমেও সরকারি গুদামে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ধান ও চাল মিলছে না।
সূত্র জানায়, ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আনার আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে চলতি আমন মৌসুমে সরকার ১০ লাখ টন ধান ও চাল কেনার টার্গেট নিলেও এখন পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মাত্র পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টনের। সংগ্রহ করা হয়েছে তিন লাখ ২৩ হাজার টন, যা মোট টার্গেটের এক-তৃতীয়াংশেরও কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘মজুদ বাড়াতে ৯-১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু চাল আমরা পেয়েছি। বোরোর উৎপাদন দেখে বাকি চালের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার আমন মৌসুমে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল সাড়ে তিন লাখ টন। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ২৭ টন। সিদ্ধ চাল সাড়ে পাঁচ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৬ টন। এক লাখ টন আতপ চালের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৬০৬ টন। সব মিলিয়ে ১০ লাখ টনের বিপরীতে তিন লাখ ২৩ হাজার ৩৫ টন ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে খাদ্য অধিদপ্তর।কারণ জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক (সংগ্রহ) মো. মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার যে চাল ৪৭ টাকা কেজিতে কিনছে, সেই চাল বাজারে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে মিলাররা কেন প্রতি কেজিতে সাত-আট টাকা লোকসান দেবে? ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ চলবে। আমরা আশা করছি, টার্গেট পূরণ হবে। যেটুকু বাকি থাকবে তা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। মায়ানমার, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সঙ্গে চাল আমদানি নিয়ে কাজ চলছে।’

গঠনমূলক সংস্কারই আমাদের মূল লক্ষ্য প্রায় অভিন্ন কারণ জানালেন বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী। তিনি জানান, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। ফলে বেশি দামে কিনে সরকারি গুদামে চাল দিতে হলে প্রতি কেজি চালে সাত-আট টাকা লোকসান গুনতে হবে মিলারদের। সরকারের উচিত, যেহেতু কম দামে চাল আমদানি করা যাচ্ছে, তাই সরকার যেন আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর বিদেশ থেকে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। ২০২৩ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৩৩ হাজার টন, ২০২২ সালে ছয় লাখ ৮৩ হাজার টন, ২০২১ সালে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার টন চাল। এ বছর উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এ ছাড়া মায়ানমার থেকে জিটুজি বা সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এক লাখ টন চাল আমদানি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান থেকেও ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করতে আলোচনা চলছে। আলোচনা চলছে ভারতের সঙ্গেও। জিটুজির বাইরে মায়ানমার থেকে উন্মুক্তভাবে ৭৫ হাজার টন চাল আসবে। শীত ও কুয়াশা নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৬ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে ১২ লাখ ৫২ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চাল আট লাখ ৫১ হাজার টন এবং গম তিন লাখ ৮৬ হাজার টন। গত বছর এ সময়ে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল অন্তত ১৫ লাখ টন।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

সর্বশেষ