বদরুন্নেসায় ১১তম প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত: প্রাণিবিদ্যা চর্চায় নতুন উদ্দীপনা

বদরুন্নেসায় ১১তম প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত: প্রাণিবিদ্যা চর্চায় নতুন উদ্দীপনা

লামিয়া আক্তার, বদরুন্নেসা কলেজ প্রতিনিধি ঃ ১১তম প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড ২০২৪-এ ঢাকা অঞ্চলের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে। এই অলিম্পিয়াডে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

৪ জানুয়ারি ২০২৫ (শনিবার) বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১তম প্রাণিবিদ্যা অলিম্পিয়াড।

ইতোপূর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা অনলাইনে প্রি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে এবং নির্ধারিত দিন ভেন্যুতে উপস্থিত হয়ে প্রতিযোগিতার জন্য চূড়ান্ত রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন ও উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তাজুল ইসলাম শামিম, প্রদর্শক প্রাণীবিদ্যা বিভাগ।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড.হামিদা খাতুন,সাধারণ সম্পাদক –

প্রফেসর ড.সগীর আহমেদ, প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম -আঞ্চলিক সম্পাদক ;ঢাকা এ,বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, প্রফেসর তামান্না বেগম, উপাধ্যক্ষ,ড.ফরিদা ইয়াসমিন,প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আফরোজা সুলতানা,এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকবৃ্ন্দ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থীগণ।

আয়োজনের শুরুতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে র‍্যালি ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করা হয় যেখানে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কর্তন করা হয়।

দুইটি গ্রুপে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক-গ্রুপ (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়) এবং খ-গ্রুপ ( স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়)।

ক -গ্রুপে রানার্স আপ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মহসিন মল্লিকা, এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নরসিংদী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাদিয়া হক জান্নাতি।

এবং খ-গ্রুপে রানার্সআপ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া তাফান্নুন নাবিলা।এবং চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হুরায়রা হাবিব।

বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন সভাপতি হামিদা খাতুন,প্রফেসর ড.আফরোজা সুলতানা ও আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম।

একইদিনে ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়েছে।বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহনকারী সকলের জন্য ছিল ‘অংশগ্রহনকারীর সনদ’।অংশগ্রহনকারী সকলের জন্য ছিল দুপুরের খাবারের আয়োজন এবং ফলাফল তৈরি হওয়া পর্যন্ত কলেজ অডিটোরিয়ামে প্রণিবিদ্যা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা এবং সেশন আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল।শিক্ষার্থীরা উক্ত সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক তাদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতাকে বৃদ্ধি করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানের ১ম পর্ব শুরু হয় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।অতঃপর বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির সভাপতি হামিদা খাতুন কে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেয় অত্র কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আফরোজা সুলতানা। অন্যান্য অতিথিদের ও ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয় কলেজের সম্মানিত শিক্ষকগণ।

এ পর্বে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেশন পরিচালনা করেন প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষক ‘আশিকুর রহমান সৌমিক।’তিনি তার আলোচনা সেশনে আলোকচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদের বিলুপ্তির ঘটনা তুলে ধরেন।মেছো বিড়াল, মেছো বাঘ, বুনে হাস সহ অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পেছনে তিনি মানবসৃষ্ট কারণকেই দায়ী করেছেন। ঢাকা শহরে ২০০০ এর বেশি অবৈধ ইটের ভাটা স্থাপন পরিবেশের ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন।তাই তরুণ প্রাণিবিদের তিনি আহ্বান করেছন নিজেদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং ধরিত্রীর সুস্থতায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে।

অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে অতিথিগণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।

প্রফেসর ড.সগীর আহমেদ (সাধারণ সম্পাদক -বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতি) তার আলোচনায় বায়োটেকনোলজির উপকারিদিক সম্পর্কে ব্যক্ত করেন।তরুণ প্রণিবিদদেরকে আহ্বান জানান,”প্রাণিকে ভালোবাসবে,পরিবেশকে ভালোবাসবে, সমাজকে ভালোবাসবে,সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসবে”

আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রওশন আরা বেগম বলেন,প্রাণীদেরও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

সকলেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রাণিবিদের উদ্ভুদ্ধ করেছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ, প্রফেসর তামান্না বেগম এ বিষয়ে তার স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।তিনি বলেন,”আমরা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারব না,তবে আমরা আমাদের চারপাশকে বদলে দিতে পারব,নিজ নিজ জায়গা থেকে ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রাণিবিদ্যা শিক্ষার প্রতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে তাদের মধ্যে আগামীতে সম্ভাবনাময়ী মনোভাব গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে অতিথিরা প্রাণিবিদ্যা চর্চার গুরুত্ব ও সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেন এবং ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ