নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান ঘনিষ্ঠ পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা মো. সামসুদ্দোহা শিমুর অবস্থান শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে গ্রেপ্তারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে। যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে। শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা এরইমধ্যে বৈষম্যবিরোধী মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা শিমুর অবস্থান নিশ্চিত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। এরআগে পুলিশের কাছ থেকে কৌশলে পালিয়ে গেলেও এবার যাতে হাত ছাড়া না হয় সে পরিকল্পনায় আগানো হচ্ছে। তাছাড়া হত্যাচেষ্টা মামলার এই আসামি ধরতে ঊধ্বর্তনদের একটা চাপ রয়েছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, শিমুকে ধরতে অগ্রগতি আছে। আপাতত আমরা তার বিষয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানাচ্ছি না। তাকে ধরতে পেলে অবশ্যই জানানো হবো।
জানা গেছে, সামসুদ্দোহা শিমু ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণেরও বিভিন্ন পদে ছিলেন। শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা। সেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। এছাড়া ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার আত্মীয় এই শিমু। কারাবন্দী আছাদুজ্জামান মিয়ার অনেক সম্পদ তার কাছে গচ্ছিত রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না। তবে সুচতুর শিমু চাকরির পাশাপাাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলো। সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে দাবি উঠেছে।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তা হয়ে রাজনীতি করতে পারবেন না এমনটি জানা ছিল না বলে দাবি আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেনের। তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অনুরোধে তাকে উপদেষ্টা করা হয়। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা যে দলীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সেটা আমি জানতাম না। শিমু দলীয় কর্মসূচিতে সব সময় উপস্থিত থাকতেন এবং সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।’
অভিযোগ রয়েছে, শিমু শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যখন কর্মরত ছিলেন তখন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্যাংকে বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব টাকায় ভাটারায় পাঁচতলা সুবিশাল বাড়ি করেছেন। নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে করেছেন অনেক সম্পদ।
সম্প্রতি শিমুকে ধরতে রাজধানীর ভাটারা থানার সাইদনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সাবেক প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ শিমুকে গ্রেপ্তারে তিনঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে বাসার বাতি নিভিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায় সে। এ সময় শিমুর স্ত্রী ও মেয়েরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তীব্র বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। বর্তমানে শিমুকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। সে যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দর ও সকল স্থলবন্দরে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাবেক গডফাদার শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই শিমু।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা সামসুদ্দোহা শিমু ছাত্র জীবনে অধুনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তোলারাম কলেজের নেতা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত গডফাদার শামীম ওসমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কথা নিজেই সবসময় গর্বভরে প্রচার করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বছিলা ব্রিজ সন্নিকটে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম ও হুকুমের আসামি এই শিমু। সে এই মামলার এহাজারনামীয় ৩৮ নম্বর আসামি।