বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একাত্তরে হত্যাযজ্ঞে সহযোগীরা এখন গলা ফুলিয়ে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষকে অরক্ষিত রেখে আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বাকশালের ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে বারবার বলতে হবে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করতো না। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং, আওয়ামী লীগকে আর কোন গণতান্ত্রিক সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ৯ মাস জেলে ছিলেন। যারা এই ইতিহাস জানেন না, তারাই জিয়াউর রহমানের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এমন সংকট তৈরি হয়েছে যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত আজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে, যেটা আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা আমাদের দেশকে রক্ষা করে, যারা সংকটে পাশে এসে দাঁড়ায়, তাদের কখনোই আমরা বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।
সংস্কার কোনো নতুন জিনিস নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের অনেকগুলো বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছে। অথচ দেশে প্রথম সংস্কার নিয়ে এসেছেন জিয়াউর রহমান। এরপরে মৌলিক সংস্কার করেছেন খালেদা জিয়া। এবারও রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে যেতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি আছে, যাতে জনগণের কল্যাণ হতে পারে? আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যাতে এই প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কাউকে সাহায্য করা যায়, দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ সরকার পরিবর্তন করতে পারে। আর ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলে বিতাড়িত করে সরকার পরিবর্তন করে জনগণ। এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। ছাত্র-জনতা তাকে বিদায় করেছিল। একইভাবে শেখ হাসিনাকেও বিদায় করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, নানা অজুহাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা চলছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে; ‘সব বুঝি, কিন্তু বলতে চাই না।’
অতি দ্রুত নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে মানুষ নির্বাচনমুখী হবে। তখন যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আর টিকতে পারবে না।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও আহমদ আজম খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।