শেখ সাইফুল ইসলাম কবির বিশেষ প্রতিনিধ:শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে গবাদি পশু পালনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গুলিশাখালী গ্রামের ৩৪ বছর বয়সী মিলি আক্তার। মাত্র ২৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই নারী নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন অনেক আগেই। কিন্তু দরিদ্রতা ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এবার তার পাশে দাঁড়িয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল মিলির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাকে দুটি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল, ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাবির, এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ মোরেলগঞ্জ এপি শাখার এরিয়া ম্যানেজার তপন কুমার মণ্ডলসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া মিলির জীবন ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। জন্মের আগেই তার বাবা নজরুল ইসলাম পরিবার ছেড়ে চলে যান। দারিদ্র্যের কারণে মা ফরিদা ইয়াসমিন মেয়েকে নানা-নানির কাছে রেখে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দেশে ফিরে দেখেন, মিলির বয়স বেড়েছে, কিন্তু উচ্চতা রয়ে গেছে আগের মতোই—মাত্র ২৮ ইঞ্চি!
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও মিলি নিজের কাজ নিজেই করতে অভ্যস্ত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলেন—রাত ১১টায় ঘুমানো, সকালবেলা দাঁত ব্রাশ করা, গোসল করা, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সময় কাটানো। তবে মিলির কিছু স্বপ্ন আছে, যা এখনো পূরণ হয়নি। তার ইচ্ছে নিজের জন্য একটি দুইতলা বাড়ি তৈরি করা, যাতে সে সহজে চলাফেরা করতে পারে। গবাদি পশু পালন করে স্বনির্ভর হওয়াটাও তার অন্যতম লক্ষ্য। এমনকি গাড়িতে চড়ার ইচ্ছাও আছে তার।
মিলির মা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “ছোট থেকেই মিলিকে চিকিৎসা করানোর সুযোগ হয়নি। ভালো খাবারও দিতে পারিনি। অনেক কষ্টে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, এখন ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াও কঠিন হয়ে গেছে। সরকারি সাহায্য বলতে প্রতিবন্ধী কার্ডই একমাত্র ভরসা। কিন্তু মেয়ের জন্য যদি কিছু করতে পারি, তবে শান্তি পাব।”
মিলির বড় বোনের ছেলে মো. রাহাত বলেন, “ছোটবেলা থেকেই মিলি আমাকে জিজ্ঞাসা করত, ‘তুমি বড় হও, কিন্তু আমি বড় হই না কেন?’ এসব ভাবলে ওর মন খারাপ হয়ে যায়।”
প্রতিবেশী আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, “ছোট থেকে মিলিকে যেমন দেখছি, এখনো তেমনই! বয়স হয়েছে ৩৪, কিন্তু এখনো সে বাচ্চাদের মতোই। এই মিলির ভবিষ্যৎ কী? সরকার এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমি তার জন্য সহায়তার আহ্বান জানাই।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, “মিলির জন্য আমরা যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার চেষ্টা করব।”
উপজেলা প্রশাসনের এই সহায়তা হাতে পেয়ে মিলি ও তার পরিবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে মিলির স্বপ্নপূরণ পুরোপুরি হয়নি এখনো। তার দুইতলা বাড়ি ও গবাদি পশুর খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজের সহৃদয়বান মানুষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে হয়তো মিলির জীবন আরো একটু সহজ হবে, পূরণ হবে তার লালিত স্বপ্ন।